আমাদের সম্পর্কে জানুন

বাংলাদেশ একটি দরীদ্র উন্নয়নশীল দেশ। রাষ্ট্রের উন্নয়নে যেমন সরকার ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে তেমনি জনগনেরও উচিৎ সরকারকে সহযোগীতা করা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে সাধারন মানুষ দাড়াবে এই স্বপ্ন নিয়ে , ব্লগার নেবুলা মোর্শেদ ও ব্লগার রাফাত নুর ২০১২ সালে বরিশাল শহরের আনাচে কানাচে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ খুঁজে খুঁজে তাদের খাবারের বন্দবস্ত করে দিতেন। এই ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতো শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধি, শিশু, গৃহহীন মানুষেরা।
অই সময়ে বেশ কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসার জন্যও এই দুজন বেশ কাজ করেছিলেন।
এই সকল কাজের জন্য তাদের অর্থের উৎস ছিলো, ছবি আর্ট করে সেগুলো বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা। তাদের সেই আয়ের উৎসটির নাম ”ছবির হাট” ফেসবুকে তাদের সেই আয়ের উৎসের পেইজটি এখনও আছে, এই লিংকে গেলে পাবেনঃ https://www.facebook.com/bdchobirHat/
(কেবল মাত্র কারো প্রয়োজন হলেই এখান থেকে ছবি বিক্রয় হয়, দানের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ছবি বিক্রয় হয়না। কারো যদি ভালো লাগে প্রয়োজন হয় তবে ছবি ক্রয় করতে পারে।)

ছবি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রয়োজন ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই ছবি গুলো বিক্রয় হয়ে আসছে, অনেক গ্রাহক জানেনও না যে তার ক্রয় করা ছবিটির পারিশ্রমিক দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবা করা হচ্ছে।

এই কর্মসুচীর নামের ক্ষেত্রে এক টাকা শব্দটিকে ব্যবহার করার কারনঃ
কারন বাংলাদেশের বিনীময় প্রথার প্রাচীন রেওয়াজ হলো লেনদেনের প্রতিপক্ষ্যকে সন্মান জানাতে এক টাকা শব্দটির ব্যবহার। যেমন এই দেশের প্রতিটি বিবাহের কাবিনে এক টাকা শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়, যেমন কাবিনের কাগজে লেখা হয় , “ তিনলক্ষ এক টাকা কাবিন ধার্জ্য করা হইল “ অথবা “ পাঁচ লক্ষ এক টাকা কাবিন ধার্জ্য করা হইলো”
শুধূ বিয়ের কাবিন নয়, জমি জমা সংক্রান্ত কেনাবেচার লেনদেনেও জমির মুল্যের সাথে এক টাকা শব্দটিকে যোগ করার রেওয়াজ শত শত বছর ধরে চলে আসছে।
আমাদের কাছ থেকে যেসকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষ খাবার নিয়ে যায়, তারা আমাদের কাছে অতি সন্মানিত গ্রাহক , কিন্তু যথাযথ মুল্য পরিশোধের সাধ্য তাদের নাই। তাই আমরা খাবারের মুল্য এক টাকা নির্ধারন করেছি।

আয়ের উৎসঃ
আমাদের এই কর্মসুচীটি মুলত ছবির হাট সংস্থার দ্বারা ব্যয় নির্বাহ হয়ে থাকে। আর্ট পেইন্টিং,কুটির শিল্প,পুরাতন বই/ নকশি কাথা,গ্রামিন দরীদ্র জনগোষ্ঠির হাতে তৈরী পোশাক ও বস্রজাত শিল্প, রাসায়নিক সার ও কিটনাশক মুক্ত চাল এবং সবজি, নদী থেকে আহরন করা সম্পুর্ন প্রাকৃতিক মাছ ইত্যাদি পন্য বিক্রয়ের মাধ্যমে কর্মসুচির ব্যয় নির্বাহ হয় ছবির হাট সংস্থা এর নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে।(এপ্রিল ২০২০ তথ্য মোতাবেক) এবং উপার্জনের এই কর্মকান্ডে পারিশ্রমিকের মাধ্যমে জড়িত থাকে গ্রামের দরীদ্র বেকার জনগোষ্ঠি এবং তাদের প্রতি শর্ত থাকে তাদের পারিশ্রমিক প্রদানের পরে ছবির হাট প্রতিষ্ঠানের মুনাফা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিকট এক টাকার বিনিময়ে খাবার বিক্রয় করা হবে।
কর্মসুচীর ব্যয় নির্বাহের জন্য আমরা কোন প্রকার চাঁদা বা দান সংগ্রহ করার চেস্টা করি না। কারন কারো দানের মাধ্যমে যদি খাবার প্রদান হয় তবে সেটি এক টাকায় খাবার হবে না, সেটা দানের টাকায় খাবার হয়ে যাবে, আমাদের লক্ষ্য দানের টাকায় খাবার নয়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ নিজের টাকায় খাবার কিনে খাবে। দরীদ্র মানুষের উপার্জন থেকেই দরীদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষ খাবার পাবে।
আমরা চাইলে দানের টাকা দিয়ে সম্পুর্ন ব্যায় বহন করতে পারতাম, কিন্তু তাতে ভিক্ষাবৃত্তি ও দারীদ্রতা দুর হতো না! উল্টো দান গ্রহনের মাধ্যমে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ভিক্ষুকে পরিনত হতাম। এবং এক এক টাকায় খাবার নামের যথার্থতা থাকতো না। একটি কথা বলে রাখি তা হলো, দানের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে আমাদের পন্য বিক্রয়ের চেস্টা হয়না। কারো প্রয়োজন হলে গুনগত মান যাচাই করে সে পন্যটি ক্রয় কতে পারে।

একই নামে একাধীক সংগঠন প্রসংগেঃ
২০১২ সাল থেকে মানব সেবার মাঠে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে যে ছোট বাচ্চাটি আমাদের হতে এক টাকা দিয়ে খাবার কিনে নিতো সে এখন বড় হয়ে গেছে এধরনের অনেক ছবি আমাদের পেইজে রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে প্রজেক্ট এক টাকায় খাবার এই নামের সাথে মিল রেখে অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন কতৃক কর্মসুচী পরিচালিত হতে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার সম্পর্ক নাই।

আমাদের খাবার ক্রয়কারী গ্রাহকদের প্রসংগেঃ
আমরা দরীদ্র বেকার মানুষদের উপার্জনের পথ তৈরী করে দিচ্ছি এবং প্রতিষ্ঠানের মুনাফা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার বিতরন করছি । এই সকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা কেউ বয়সের ভাড়ে দুর্বল,কেউ ছোট শিশু,কেউ শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধি।সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল ও এতিমখানা মাদ্রাসাতে আমরা এক টাকায় খাবার বিক্রয় করে থাকি যাতে তারা শিশুশ্রমে জড়িত না হয়ে পড়ালেখায় আগ্রহী হয় । আমরা বিশ্বাস করি দির্ঘদিন মানুষের কাছে হাত পেতে দান গ্রহন করে দরিদ্রদের সেবা দেওয়া যায় না, তাই আমরা ২০১২ সাল থেকেই আয়ের পথ সৃস্টি করেছি। আর বসিয়ে বসিয়ে খাবার বিতরন করে এই বৃহত জনগোষ্ঠিকে অলস জাতীতে পরিনত করলে সেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের আয়ের পথ সৃস্টি করেছি।

আমাদের খাবারের বাজার মুল্যঃ
বীনামুল্যে খাবার বিতরন অথবা দানের টাকার মাধ্যমে খাবার বিতরন বিষয়টা ভিক্ষাবৃত্তির পর্জায়ে পরে বিধায়, নিজেদের উপার্জন থেকে নাম মাত্র মুল্য, এক টাকার বিনিময়ে যে খাবার মেন্যুটি, সুবিধাবঞ্চিতরা পেয়ে থাকেন সেটির বাজার মুল্য ৪৫ টাকা সর্বনিম্ন (২০২০ এপ্রিল তথ্যমোতাবেক)
যেসকল অঞ্চলে আমাদের শাখা রয়েছেঃ
২০২০ এপ্রিল তথ্যমোতাবেক বাংলাদেশের ১৮টি স্থানে কর্মসুচী চলছে। শুধু মাত্র খাবার নয় শীত বস্র প্রদান , প্রাকৃতিক দুর্জোগ মহামারিতে খাবার বিতরন,দরীদ্র মুমুর্ষরোগীর চিকিৎসা সাহায্য কর্মসুচী পরিচালনা হয়ে থাকে। শিশুশ্রমে জড়িত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যাতে পড়াশুনা থেকে দুড়ে সরে না যায় তাই, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলগুলোতে খাবার দেয়া হয়, সেই সাথে এতিম খানা গুলোতেও খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই হিসাবে ঢাকা শহরে ৫ টি সুবিধাবঞ্চিত শিশু স্কুল এবং ২টি এতীম খানা আমাদের তালিকাভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা সহ , রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, বরগুনা, ঝালোকাঠি, রংপুর, ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, নারায়নগঞ্জ, বগুড়া, সাভার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ভান্ডারিয়া, নাগেশ্বরি, জামালপুর এ আমাদের কর্মসুচী পরিচালনা করে আসছি। (২০২০ এপ্রিল তথ্যমোতাবেক)
আপডেট[ বর্তমানে ভারত,নেপাল, পুর্ব আফ্রিকার উগান্ডা রাষ্ট্রে প্রজেক্ট এক টাকায় খাবার কর্মসুচি পরিচালনা করছে উল্লেখীত রাষ্ট্রের নাগরিকগন]

আমাদের অন্যান্য কর্মসুচিঃ
কেবল মাত্র খাবার বিতরন নয়, বিবেচনা স্বাপেক্ষে আমরা খাবার ক্রয়কারী সুবিধাবঞ্চিতদের বৈধ আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি, এজন্য ছোট দোকান থেকে শুরু করে গ্রামীন নারীদের কুটিরশিল্পের কাজও হয়ে থাকে আমরা এটিকে স্বনির্ভর বলে থাকি । এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চেস্টা অব্যহত রয়েছে যা জীবনতরী নামে পরিচিত।

সুবিধাবঞ্চিতদের দোকানঃ
এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিতদের দোকান নামে সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের দোকান , এই সকল দোকান সমুহ থেকে তালিকাভুক্ত সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা তাদের প্রয়োজনীয় চাল,ডাল,তেল,লবন চিনি , বিস্কুট, চিপ্স,চকলেট ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে, এবং প্রতিটি পন্যের মুল্য এক টাকায় পরিশোধ হয়ে থাকে।

মাই এম্বুলেন্সঃ
সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা সুচিকিৎসার প্রয়োজনে, আমাদের মাই এম্বুলেন্স সুবিধাটি গ্রহন করতে পারবেন। এজন্য মুল্য হিসেবে পরিশোধ করতে হবে মাত্র এক টাকা।

অনুদান সংগ্রহ না করলে সাধারন মানুষ কিভাবে যোগ দিতে পারবে ?
আমাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র খাবার বিতরন নয়, খাবার বিতরন কর্মসুচীটি সমাজের সকল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। সুবিধাবঞ্চিতদের খাবার বিতরন করতে ইচ্ছুক এমন কেউ যদি আগ্রহী হয়ে আমাদের স্বরনাপন্ন হয় তবে আমরা সেই ব্যক্তিকে শ্রম বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সর্বপ্রকার সহযোগীতা দানের মাধ্যমে তার দ্বারা কর্মসুচী পরিচালনা করে থাকি। যে ব্যক্তি দানে আগ্রহী তিনি নিজে উপস্থিত থেকে নিজ হাতে খাবার বিতরন করে থাকেন , এই ক্ষেত্রে বাজার করা সহ রান্নার সময়ও তিনি ও তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। আমরা কেবল মাত্র দানকারী ব্যক্তিকে সহযোগীতা করি ওনার আবেদন অনুযায়ী।
আমরা এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করার কারন হচ্ছে, দানে ইচ্ছুক ব্যক্তিটি যেন পরবর্তি আমাদের কর্মসুচীটি ফলোআপ করে নিজেই এমনভাবে ভবিষ্যতে খাবার বিতরন করতে পারেন এবং সেই ক্ষেত্রে ওনার কারো সহযোগীতার প্রয়োজন না হয়।

আমাদের নিয়মিত সহযোগীতা দানকারী সংস্থা সমুহঃ

১. ছবির হাট @bdchobirHat
২. এক টাকায় খাবার ভলান্টিয়ার সেকশন
৩. দুইশ টাকা শপ

প্রশ্ন আসতে পারে এসব কাজ করে আপনাদের স্বার্থ কি ?
উত্তর হবে আমাদের লস কি ? এই সংস্থার সাথে জড়িত প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ তওফিক অনুযায়ী এক বা একাধীক দরীদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে খাওয়ায়, আমরা একই মন মানসিকতার বেশ কয়েকজন মানুষ একত্রিত হয়েছি যাতে আমাদের ব্যাক্তিগত খাওয়ানোর কাজটি সামগ্রিক ভাবে করতে পারি। মানসিক তৃপ্তি ও দরীদ্রজনগোষ্ঠির ভালোবাসায় আমরা অনুপ্রানীত হয়ে ২০১২ সাল থেকে এই কর্মসুচী পরিচালনা করছি। এছাড়া বিশাল সংখ্যক দরীদ্র বেকার মানুষ কাজের সুযোগ খুঁজে পেয়েছে, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরে এসে উপার্জন করছে।

পরিশিষ্ঠঃ
মহান আল্লাহর রহমতে নিজেদের উপার্জনের টাকা দিয়ে চলছে এই কর্মসুচি। বিবেচনা স্বাপেক্ষে আমরা কিছু মানুষের সহযোগীতা নিয়ে থাকি যারা আমাদের কর্মসুচীর হয়ে কাজ করেন, ঘনিস্ট পরিচিত বন্ধু স্বজন, কিন্তু সে টাকাও তারা নিজেদের হাতেই খরচা করেন বা প্রতিনিধির মাধ্যমে খরচ করেন আমরা শ্রম দিয়ে তাদের সহযোগীতা করি। এইভাবে স্বেচ্ছাসেবক ঘনিস্ট আপনজন বন্ধু স্বজনেরা কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে মাঝে মেহমান হিসেবে ভালো উপাদেয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন।
আমরা পথে ঘাটে বক্স হাতে চাঁদা সংগ্রহ করি না। কারন দানের টাকায় বিতরন করা খাবার এক টাকায় খাবার হবে না।
বিস্তারীত আরও জানতে চাইলে ফোন করুনঃ
01723-388571 / 01707788881

Proudly powered by HostingRim | Theme: Baskerville 2 by Anders Noren.

Up ↑